সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী: ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী: ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা

ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বৃটিশ রাজকোষে তাঁর প্রদেয় অর্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি মেলে, এমনকি পরবর্তীতে তাঁর জমিদারি বন্ধকের আর্থিক অনুদানেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়, এই বিখ্যাত লোকটির মৃত্যু বার্ষিকী ছিল ১৭ এপ্রিল ।

জানাচ্ছি ভালবাসা , শ্রদ্ধা , এবং কৃতজ্ঞতা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।

তাঁর এস্টেটের অর্ধেক বন্ধক রেখেছিলেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য। এরচেয়ে বড় অবদান, আর কি হতে পারে একজন ব্যক্তির একটি জাতিকে উচ্চশিক্ষিত করার জন্য!! ।

অন্যদের কথা বাদই দিলাম বর্তমান প্রজন্ম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কয়জন স্টুডেন্ট, শিক্ষকই বা জানে উনার এই অকল্পনীয় অবদানের কথা ।

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

তিনি হলেন টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব, নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী।

বলাবাহুল্য পৃথিবীর অনন্য দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার / যাদের অর্থে বা উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণত তাঁর / তাঁদের বিশাল স্ট্যাচু প্রতিষ্ঠানের সামনে স্থাপন করা হয় প্রতিষ্ঠাতার জীবনী এবং কর্মকাণ্ড সহকারে । এবং তাঁর / তাঁদের জন্ম এবং মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণসভা, আলোচনা সভা করা হয় বিনম্র শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতার সাথে। অথচ এদেশের প্রিন্ট মিডিয়া কি কোন ক্রোড়পত্র বের করেছে আজকের এই দিনে ? ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে কি কোন ধরনের টক শো হয়েছে নওয়াব আলী চৌধুরীর মহান অবদান এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে ? কোন দোয়া, স্মরণসভা স্মৃতিচারণামূলক অনুষ্ঠান কি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে আজকের এই বিশেষ দিনে ? না, আমার জানামতে করে নাই ।

খুবই কষ্ট এবং লজ্জা লাগে যখন দেখি এই ব্যক্তিটির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল, টাওয়ার বা উল্লেখযোগ্য স্থাপনার নামকরন করা হয় নাই এখন পর্যন্ত । ( তবে কিছু বছর আগে রেজিস্ট্রি অফিসের ভিতরে নবাব আলী চৌধুরীর নামে সিনেট ভবন নামে একটি হল রুম করা হয়েছে মাত্র )

বঙ্গভঙ্গ রদের পরিপ্রেক্ষিতে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ , নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ও শের- এ- বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯১২ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে প্রস্তাব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ।এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকার রমনা সিভিল স্টেশন এলাকায় ৬০০ একর জমি দান করেন । অর্থাৎ উনার দান করা ৬০০ একর জমির উপর আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল,বুয়েটের মতো দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী সহ অনেক বিখ্যাত লোকজনের বিরোধীতার কথা কমবেশি সবারই জানা আছে ।

নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী যিনি স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর ( ১৬ই জানুয়ারি ১৯১৫ ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে সফলতায় উপনীত হয়েছিলেন। বলাবাহুল্য যে, নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন। শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ—

ঈদুল আযহা (১৮৯০)

মৌলুদ শরীফ (১৯০৩)

ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০)

প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬)

এছাড়া সুদীর্ঘ ২৩ বছর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদ, বঙ্গীয় প্রেসিডেন্সি আইন পরিষদ এবং ভারতের ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।  তিনি দেশের অবহেলিত ও অসহায় মানুষের পক্ষ হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও অভাব-অভিযোগের কথা সরকারের নিকট তুলে ধরেন।  ব্রিটিশ সরকার নওয়াব আলী চৌধুরীকে ১৯০৬ সালে ‘খান বাহাদুর’, ১৯১১ সালে ‘নওয়াব’, ১৯১৮ সালে ‘সি.আই.ই’ এবং ১৯২৪ সালে ‘নওয়াব বাহাদুর’ উপাধি প্রদান করে।

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

উল্লেখ্য যে, ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন জনাব চৌধুরী । এবং এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন নিঃস্বার্থভাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

%d bloggers like this: