দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বসানো হলো শেষ স্প্যান
আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ:
সকাল ১০টা, পদ্মার হিমশীতল বাতাস আর কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পদ্মার তীরে অপেক্ষা। নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে অনেকে ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে নেমেছেন পদ্মা নদীতে। অনেকে সেতুর কাছাকাছি চরে অবস্থান করেছেন। সবাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত যুক্ত হওয়ার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায়।
৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে নদীর দুই প্রান্ত যুক্ত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে আজ । এমন কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে পদ্মার পাড়ে ভিড় করেছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিয়েছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকা ও পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো পিলারের কাছে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সকল বাধা-বিপত্তি পাশ কাটিয়ে অবশেষে সংযোগ ঘটেছে পদ্মাসেতুর দুই পাড়ের। বসেছে স্বপ্নের সেতুর ৪১তম ও শেষ স্প্যানটি। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ৪১তম স্প্যান বসানো কাজ।
এর মাধ্যমে দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তবতার সন্ধিক্ষণে। এর আগে বুধবার স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেনে তুলে ১২ এবং ৩ নম্বর খুঁটির কাছে এনে রাখা হয়।
পদ্মাসেতুর ৪২টি খুঁটি ও ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। শধু নদীতে সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। রোড ভায়াডাক্ট ৩.৮ কিলোমিটার। রেল ভায়াডাক্ট ০.৫৩২ কিলোমিটার।
অর্থাৎ সেতুর মোট দৈঘ্য ১০ দশমিক ৪৮২ কিলোমটার। নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়ক উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ কাজ করছে। নদী শাসন কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আবুল মোনেম লিমিটেড। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের দাবি উঠেছিল। সেই দাবি থেকে কাজ শুরু হতে আরও এক দশক সময় লেগে যায়। এরপর বিশ্বব্যাংকের অথসহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। দুনীতির অভিযোগ উঠে। অবশ্য দুনীতি প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা খারিজ হয়।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই সেতু দেশের নিজস্ব অর্থে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে।
তবে নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্রের কারণে কাজ আরও পিছিয়ে যায়। সাড়ে ৪ বছর ধরে শুধু সেতুর খুঁটির কাজ চলে। আর ৩ বছর লাগে সেই খুটিতে স্প্যান বসাতে। অবশেষে ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান তুলে দিয়ে সেতুর চালুর দিকে যাচ্ছে সরকার।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সেতুর ওপরে সড়ক ও ভেতরে রেলপথের কাজ শেষ করে চালু করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।